‘ফরহাদ আমাকে বাঁচা, আমি আগু'নের মধ্যে আছি’- এভাবেই ফোনে চাচাতো ভাই ফরহাদের কাছে বাঁ'চার আকুতি জানিয়েছিলেন মোমিনুল হক। কিন্তু তা আর হলো না। চিরবিদায়ই নিতে হলো মোমিনুল হককে। শনিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোতে বি'স্ফো'রণে নি'হত হন তিনি।
শনিবার রাত দেড়টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ইমা'রজেন্সি কেয়ারে মোমিনুল হকের লা'শ ধরে কান্না করতে করতে তার শেষ কথাগু'লো বলছিলেন ফরহাদ।
ফরহাদ বলেন, আমা'র ভাই মোমিনুল হক আমাকে বাঁচাতে বলেছিলেন, আমি বাঁচাতে পারিনি। আমা'র ভাই পড়ালেখার পাশাপাশি সেখানে চাকরি করতেন। গত কয়েকদিন আগে আমাকে বলেছিলেন, তুই বাড়ি কখন যাব'ি। তোকে সঙ্গে নিয়ে এবার বাড়ি যাব'ো। এখন ভাইকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। কিন্তু জীবিত নয়, মৃ'ত।
নি'হত মোমিনুল হকের চাচা খোরশেদ আলম বলেন, আমা'র বড় ভাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। সেখান থেকে অবসর নিয়েছেন৷ বড় ছেলে মহসিন কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স শেষ করে তিন-চার মাস আগে কম্পিউটার অ’পারেটার হিসেবে চাকরিতে যোগ দিয়েছে। সে মহসিন কলেজে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে। কিছুদিন পরে পরীক্ষা হবে। কিন্তু তার পরীক্ষা আর দেয়া হলো না।
নি'হত মোমিনুল হক চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া এলাকার মাস্টার ফরিদুল আলমের ছেলে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।
ফা’য়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, শনিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বিএম কনটেইনার ডিপোর লোডিং পয়েন্টের ভেতর আগু'ন লাগে। খবর পেয়ে কুমিরা ফা’য়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগু'ন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে রাত পৌনে ১১টার দিকে এক কনটেইনার থেকে অন্য কনটেইনারে আগু'ন ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে একটি কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক থেকে 'বিকট শব্দে বি'স্ফো'রণ ঘটে।
বি'স্ফো'রণের সময় ঘটনাস্থল থেকে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। বি'স্ফো'রণের প্রচণ্ড শব্দে আশপাশের অনেক বাড়ির জানালার কাঁচ ভেঙে পড়ার খবরও পাওয়া যায়।
সর্বশেষ রাত সাড়ে ৩টায় আগু'ন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিল ফা’য়ার সার্ভিসের ২৪টি ইউনিট।
ফা’য়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন সিকদার বলেন, আগু'ন নিয়ন্ত্রণে আনতে আমর'া আপ্রাণ চে'ষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। রাসায়নিক দ্রব্য থাকায় বারবার কনটেইনার বি'স্ফো'রিত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, প্রায় চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে লাগা আগু'ন নিয়ন্ত্রণে ফা’য়ার সার্ভিসের কর্মীদের বেগ পেতে হচ্ছে। কারণ একের পর এক বো'মা'র মতো কনটেইনার বি'স্ফো'রিত হচ্ছে। শুরুতে ফা’য়ার সার্ভিসের কর্মীরা কনটেইনারের কাছাকাছি গিয়ে আগু'ন নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে প্রায় দশজনের বেশি আ'হত হন। তাদের উ'দ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আগু'ন নেভাতে পানির স্বল্পতাও রয়েছে আমা'দের।
Leave a Reply