সেই একই দল। কিন্তু মাত্র এক স'প্ত াহের ব্যবধানে কিভাবে এতটা বদলে গেলো? যে দলটি বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের একটিতেও ২০০’র কাছাকাছি যেতে পারেনি, সেই দলটিই কি না ভারতের বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচে করে ফেললো ৩০০ প্লাস রান!
নিকোলাস পুরানের নেতৃত্বাধীন দলটি বাংলাদেশের বিরু'দ্ধে তিনটি একদিনের ম্যাচে অলআউটে হয়েছে ১৪৯, ১০৮ ও ১৭৮ রাটে। কোনও ম্যাচেই পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করতে পারেননি ক্যারিবীয়রা। তিনটি ম্যাচই বড় ব্যবধানে জিতেছিলেন তামিম ইকবালরা।
সাতদিন পরে সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজই যেন পুরোপুরি বদলে গেল। ভারতের বিরু'দ্ধে প্রথম দু’টি এক দিনের ম্যাচেই ৩০০’র বেশি রান করেছে তারা। ম্যাচ দুটিতে ভারত জিতলেও এর জন্য ঘাম ছোটাতে হয়েছে শিখর ধাওয়ানদের। শেষ ওভারে হয়েছে ম্যাচের নিষ্পত্তি।
কিভাবে এতটা বদলে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ? সত্যিই কি তাদের খেলার মান ভাল হয়েছে? না কি বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ ক্রিকেট খেলেছে ভারত? যার ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অনেক ভাল দল দেখাচ্ছে। কী কী কারণ থাকতে পারে এই পরিবর্তনের পেছনে?
এ নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে ভারতীয় মিডিয়াগু'লো। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা তো এ নিয়ে একটি বিশ্লেষণও প্রকাশ করে ফেলেছে। সেখানে তারা ভারতের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভালো খেলার কারণ খুঁজে বের করার চে'ষ্টা করেছেন।
ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছে ৩০৫ রান। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে করেছে ৩১১ রান। যদিও দুই ম্যাচেই পরাজিত দলের নাম ক্যারিবীয়রাই।
windies cricket
বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরু'দ্ধে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই একই দলই খেলেছে। অথচ দুই দলের বিপক্ষে ছবিটা আলাদা। সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমছাড়া প্রথম একাদশের প্রায় সবাইকে নিয়ে খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ।
অন্যদিকে ভারতীয় দল ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলতে গেছে রোহিত শর্মা, বিরাট 'কোহলি, লোকেশ রাহুল, রিশাভ পান্ত, হার্দিক পান্ডিয়া, রবিন্দ্র জাদেজা, ভুবনেশ্বর কুমা'র, মোহাম্ম'দ শামি, যশপ্রিত বুমর'াহর মতো প্রথম দলের ক্রিকেটারদের ছাড়া। বিশেষ করে বোলিং বিভাগে ইয়ুজবেন্দ্র চাহাল ছাড়া বাকিদের অ'ভিজ্ঞতা অনেক কম।
পরিবর্তন হয়েছে মাঠেও। বাংলাদেশের বিরু'দ্ধে গায়ানার প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামে ম্যাচ তিনটি খেলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওই মাঠে উইকে'টের দু’দিকে বাউন্ডারির দূরত্ব ৮০ এবং ৭৮ মিটার। অন্যদিকে ভারতের বিরু'দ্ধে ত্রিনিদাদের কুইন’স পার্ক ওভালে খেলছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই মাঠ অ’পেক্ষাকৃত ছোট। উইকেট থেকে দু’দিকের বাউন্ডারির দূরত্ব ৬২ ও ৭০ মিটার। বড় মাঠে চার-ছক্কা মা'রা কঠিন। ভারতের বিরু'দ্ধে মাঠ ছোট হওয়ায় সেই সমস্যা হয়নি নিকোলাস পুরানদের।
পার্থক্য ছিল উইকে'টেও। প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামের পিচ স্পিন সহায়ক। বাংলাদেশের স্পিনাররা তিন ম্যাচে ক্যারিবীয়দের মোট ২১টি উইকেট নিয়েছেন। নিজেদের দেশেও স্পিন সহায়ক উইকে'টে খেলে বাংলাদেশ। সেখানে গিয়ে অ'স্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো বড় দলও সমস্যায় পড়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে নিজেদের পছন্দের উইকেট পেয়ে বাজিমাত করেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদরা। অন্য দিকে কুইন’স পার্কে স্পিনারদের জন্য সামান্য সুবিধা থাকলেও সুইং নেই। পাটা উইকে'টে বল করতে সমস্যায় পড়েছেন ভারতীয় পেসাররা।
প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামে মোট ২৫টি একদিনের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ সিরিজের আগে এই মাঠে শেষ ২০১৭ সালে পাকি'স্তানের বিরু'দ্ধে এক দিনের ক্রিকেট খেলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই মাঠে এক ইনিংসে সর্বাধিক রান ৩০৯। সর্বনিম্ন রান ৯৮। প্রথম ইনিংসের গড় রান ২১৬।
অন্য দিকে কুইন’স পার্কে হয়েছে ৭০টি এক দিনের ম্যাচ। এক ইনিংসে সর্বাধিক রান ৪১৩। সর্বনিম্ন ৭৫। প্রথম ইনিংসের গড় রান ২৬৫। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যাচ্ছে গায়ানার তুলনায় ত্রিনিদাদের মাঠে রান করা অ’পেক্ষাকৃত সহজ। সেটা দেখা গেছে বাংলাদেশ ও ভারতের বিরু'দ্ধে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলায়।
ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ৩০৫ তাড়া করে জয়ের পর ভারতীয় অধিনায়ক শিখর ধাওয়ানও বললেন প্রায় একই কথা। তার দাবি, স্পিন বান্ধব উইকেট হওয়ায় বাংলাদেশের বিপক্ষে রান করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভারতের বিপক্ষে ভিন্ন উইকেট পেয়ে রান করছে তারা।
বাংলাদেশের কাছে শোচনীয়ভাবে ৩-০ ব্যবধানে হারের পর ভারতের বিরু'দ্ধে মাঠে নামা'র আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক নিকোলাস পুরান জানিয়েছিলেন, এটি তাদের কাছে নিছক সিরিজ নয়, বাঁ'চার লড়াই। বাংলাদেশের কাছে হেরে যে অ'সম্মান হয়েছে, সেখান থেকে দলকে টেনে তোলার লড়াই।
india-west indies
সেই লড়াই’ই দেখা গেছে ক্যারিবীয়দের খেলায়। বদলে গিয়েছে শরীরী ভাষাও। শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছেন তারা। তাই তো মাত্র ৩ রানে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ জেতার পরে পুরান বলেছেন, ‘মনে হচ্ছে যেন আমর'াই জিতেছি।’ ২ উইকে'টে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচ হারের পরে বিধ্বস্ত দেখিয়েছে পুরানকে। বলেছেন, ‘খুব পরিশ্রম করেছিলাম। জেতাটা খুব দরকার ছিল।’
তবে ভারতীয় মিডিয়া কিংবা শিখর ধাওয়ান যতই যুক্তি দেখাক তাদের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভালো খেলো, বাংলাদেশের বিপক্ষে খারাপ খেলার পেছনে, তাতে বরং সত্য দামাচা’পা থাকবে না। কারণ, ওয়ানডেতে এখন বাংলাদেশ অনেক শক্তিশালী দল- এটা মানতে হবে যে কাউকেই।
সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার মাটি থেকে বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজ জিতে প্রমাণ করেছে সেটা। অথচ, বাংলাদেশের মাত্র কিছুদিন আগে রোহিত শর্মাছাড়া বাকি সবাইকে নিয়ে পূর্ণশক্তির ভারতীয় দল দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরেছে ৩-০ ব্যবধানে। সেখানে বাংলাদেশ জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। এখানে কী পার্থক্য তুলে ধরবে ভারতীয়রা?
Leave a Reply