পাবনার সুজানগরের কৃষক পরিবারের সন্তান রাতুল হাসান। ছোটবেলা থেকে মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন ছিল তার। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। কৃষক বাবাসহ পরিবারের সবার মুখ উজ্জ্বল করেছেন তিনি। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ১৭৬তম হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
এক ঘণ্টা সময়ের ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষায় রাতুল পেয়েছেন ৮০ দশমিক ২৫। তার মেরিট স্কোর ২৮০ দশমিক ২৫। তার ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল পাবনা মেডিকেল কলেজ। রাতুল হাসান সাধারণ এক কৃষক পরিবারের সন্তান। নিজের চে'ষ্টা, পরিবারের সদস্যদের এবং চাচা আনোয়ার হোসেন লিটন ও মামা আব্দুর রাজ্জাকসহ শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় অদম্য মেধাবী এ শিক্ষার্থী নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।
কোনো বাধাই দমিয়ে রাখতে পারেনি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বেড়ে উঠা রাতুলের শিক্ষাজীবনের পথ চলাকে। অদম্য সেই রাতুল এবার ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। রাতুল পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার তাঁতীবন্দ ইউনিয়নের বাড়ইপাড়া গ্রামের এক অতি সাধারণ পরিবারের সন্তান। বাবা মো. মনোয়ার হোসেন পেশায় একজন সাধারণ কৃষক ও মা মোছা. রেবেকা খাতুন গৃহিনী। দুই ভাইয়ের মধ্যে রাতুল বড়। ছোটবেলা থেকেই তিনি অদম্য মেধাবী ছিলেন।
রাতুল বাড়ইপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর মথুরাপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।২০২০ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করেন।পরে পাবনা সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হয়ে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পান তিনি। এ ছাড়া রাতুল শিক্ষাজীবনে বৃত্তিসহ বিভিন্ন মেধা নির্বাচনি পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করেন।
এদিকে সুজানগর উপজেলা থেকে একমাত্র ঢাকা মেডিকেলে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী রাতুলের পরিবার, তার নিজ গ্রামসহ উপজেলায় বইছে আনন্দের বন্যা। ঢাকা মেডিকেল কলেজে উপজেলার একমাত্র শিক্ষার্থী হিসেবে রাতুল চান্স পাওয়ায় পুরো উপজেলার মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ'ভিনন্দন জানাচ্ছেন তাকে।
রাতুল বলেন, ঢাকা মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় প্রথমেই মহান আল্লাহর শুকরিয়া আ'দায় করছি। ছোটবেলা থেকেই আমা'র স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। আর সেই লক্ষ্যে আমি লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছি। সরকারি মেডিকেলে চান্স পেয়ে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। সবাই আমা'র জন্য দোয়া করবেন, আমি যাতে একজন আদর্শবান ডাক্তার হয়ে নিজ গ্রামসহ আমা'দের উপজেলার দরিদ্র-অ'সহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, আমি সাধারণ কৃষক পরিবারের একজন সন্তান হওয়ায় নিজে লেখাপড়ার পাশাপাশি মাঠে বাবার কৃষি কাজেও সহযোগিতা করতাম। আমা'র এই ভালো ফলাফলের পেছনে মা-বাবা, চাচা, মামা ও শিক্ষকদের অবদান অ’পরিসীম। ছেলের এই সাফল্যে আনন্দে কেঁদেই ফেলেন রাতুলের মা-বাবা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ছেলের সাফল্যে খুব আনন্দ হচ্ছে। আল্লাহ আমা'দের পুরস্কৃত করেছেন। আমা'দের ছেলে যাতে ভালো ডাক্তার হয়ে গরিব ও অ'সহায় মানুষের সেবা করতে পারে, সে জন্য সবার দোয়া কামনা করছি।
রাতুলের চাচা আনোয়ার হোসেন লিটন বলেন, ছোটবেলা থেকেই রাতুল লেখাপড়ায় ছিল অদম্য মেধাবী। অবশেষে আমা'দের পরিবারের সবার প্রচে'ষ্টা, শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা ও সর্বোপরি রাতুলের নিজ প্রচে'ষ্টায় সে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। মথুরাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের বলেন, রাতুল খুবই মেধাবী ছাত্র। সে জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় আমা'দের প্রতিষ্ঠান থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। তার কৃতিত্বে আমর'া গর্বিত।
সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজ পাবনার উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহফুজুল বারী (বারী স্যার) বলেন, রাতুলের সাফল্যে সত্যিই আমর'া গর্ববোধ করছি। ঢাকা মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় রাতুলকে অ'ভিনন্দন জানিয়ে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মক'র্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, রাতুল তার লালিত স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে একজন গর্বিত ডাক্তার হয়ে যেন দেশের সাধারণ মানুষের সেবা করতে পারেন সেই প্র'ত্যাশা রাখছি।
CCleaner is the number one tool for cleaning your PC.
It protects your privacy and makes your computer faster and more secure.
Leave a Reply